• বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন

শষ্যের ভেতর ভূত!

রাজনীতির অন্তরালে ক্ষমতা নাকি জনগণের জন্য রাজনীতি

admin
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

এইচ. এম. রেজাঃঃ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর ঘোষণায় ১৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। তিনি উপলব্ধি করছেন– দেশের মঙ্গলের জন্য দ্রুত একটা রাজনৈতিক ও স্থিতিশীল সরকার দরকার। কারণ, মবাতঙ্ক, তৌহিদী জনতার নামে উগ্রতা, নারী নির্যাতন, ছিনতাই-ডাকাতি-রাহাজানির কারণে সম্পদ ও প্রাণহানি এবং প্রধান সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর দাবি আদায়ের আন্দোলনে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। মানুষের দুর্ভোগ নিরসনের জন্য দরকার একটি নির্বাচিত সরকার।

যে কারণে সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার জাতীয় নির্বাচন আয়োজন। কারণ, সাধারণ মানুষ বহু বছর ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত। আওয়ামী লীগ সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে, চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত ও জাতিকে বিভাজিত করে। ফলে, বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর বয়কট করে ২০১৪ সালের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিনা ভোটে ১৫৩ জন এমপি নির্বাচিত হয়। বাকি ১৪৭ আসনের অধিকাংশে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে অধিকাংশ দল অংশ নিলেও বহুল আলোচিত রাতের ভোট হিসাবে চিহ্নিত হয়। ২০২৪ সালেও আওয়ামী লীগ নিজেরা-নিজেরা নির্বাচন করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন শক্তি শালী করার জন্য নতুন ভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ কয়েকজন কমিশনার।
সরকার এই নির্বাচন কমিশন গঠনের পর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করাসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন। কমিশনের প্রধান ও সদস্যগন বিভিন্ন বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময় অনুযায়ী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে কাজ চলছে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং সুষ্ঠ,নিরপক্ষ নির্বাচন আয়োজন করার জন্য গঠিত নির্বাচন সংস্কার কমিশন নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামীক শাসনতন্ত্র সহ- বিএনপির ২০ দলীয় জোট -ছাত্র ছাত্রীদের কোটা আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন। ১৫ জুলাই থেকে সরাসরি ছাত্র জনতা হয়ে সারাদেশে রাজপথে নেমে যায়। পরে কোটা আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন এবং ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সমাপ্তি ঘটে। এর পর থেকে সারাদেশে চলে জ্বালা ও পোড়াও ভাংচুর হত্যা ধর্ষণ নির্যাতন এরকম অবস্থায় গঠিত হয় ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। নতুন করে মব জাসটিজ, নির্যাতন করে ধরিয়ে দেওয়া।

সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন অন্যতম ছাত্র প্রতিনিধি নাহিদ ইসলাম এবং নতুন দল গঠন করেন সংক্ষেপে নাম এনসিপি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এত ব্যয়বহুল রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দল করেনি। অতীতে কোনো রাজনৈতিক দল সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি এই ধরনের অনুষ্ঠান করার জন্য এবং সরকারের সহযোগিতায় যাতায়াত করতে বাস ও গাড়ি সহ- বিভিন্ন সহযোগিতা পায় নাই কোন দল। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব তার বক্তব্য সহযোগিতার কথা এড়িয়ে গেলেও তার গ্রহণযোগ্যতা পায় নাই সাধারণ মানুষের মধ্যে। বরং জেলা প্রশাসক সরকারের অংশ হওয়া সত্ত্বেও যে জেলা প্রশাসন অনৈতিক কাজ করেছে, সেই জন্য ওই ডিসিকে তাৎক্ষণিক ভাবে বরখাস্ত করা প্রয়োজন ছিল। তাহলে মানুষ বুঝাতে পারতো সরকার এ অনৈতিক কাজকে সমর্থন করে না।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এক বিবৃতি দিয়েছে যে সরকার এ ঘটনায় দায় এড়াতে পারে না।

নতুন দলের দুজন প্রাক্তন সহকর্মী সরকারে আছেন যারা বিভিন্নভাবে দলের নীতিনির্ধারণীতে প্রভাব বিস্তার করে সুবিধা দিতে পারে। তার হলেন উপদেষ্টা আসিফ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চেয়েছে– যা প্রকারান্তরে এনসিপি’র দাবি। এ দাবির মাধ্যমে দেশের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন পেছানো মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করা হয়। এর বিরোধিতা করেন খোদ ছাত্র জনতা আন্দোলনের বড়ো অংশিদার বিএনপি সহ ২০ দলীয় জোটের অনেকে।
ছাত্র সংগঠন আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডেকে এনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের অপমান ও অপদস্ত করে, যে কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘটনা ঘটছে।
এরপর, যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের অনেকেই নতুন ছাত্র সংগঠন বা শিবিরের পদ পেয়েছে, যা তাদের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ নুরুল হক নুরের সাথে রাজনীতি করেছে, নুরের কাছ থেকে রাজনীতি শিখেছে। নুর ও তার দল গণ-অধিকার পরিষদ আন্দোলনে সরাসরি সামর্থ্য অনুযায় পাশে ছিল। এছাড়া, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪-পর্যন্ত ৬ টি বছর ব্যক্তি গত ভাবে নুরুল হক নুরের অনুসারী ছাত্ররা নতুন ছাত্র সংগঠন করার সময় নুর ও তার দল গণ-অধিকার পরিষদের ক্ষতি করেছে। নুরের দল থেকে বেশ কয়েক জন নতুন দলে যোগ দিলেন। অনেকে আবার ফিরেও আসছে।
সকল দলের আয় ব্যয় এর হিসাব দিতে হবে এবং থাকতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশের ইতিহাস ব্যয়বহুল সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন দল গঠন করেন কিন্তু এর আয় ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা হয় নাই। যে কারণে মানুষের আস্থা অর্জনের সুযোগ হারান নাহিদ ইসলামের নতুন দল ।
তাহলে বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টি বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে পার্থক্য কী থাকলো?

সকল রাজনৈতিক দলে অর্থ দাতাদের তালিকা প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করা দরকার। কে কত টাকা দিচ্ছে, নগদ অর্থের বাইরে “কে কি সুবিধা দিবেন, তা প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক হওয়া দরকার” ।

ধর্মভিত্তিক বেশ কয়েকটি টি দল অক্যবদ্ব ছিল। ২০১৩ সালে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে সরকার বিরোধী কয়েকটি দল তাদের মঞ্চে উঠে সরকার বিরোধী বক্তব্য দিলে সরকার কঠোর হয় এবং তাদের সমাবেশ ছেড়ে চলে যেতে বলে। তার উল্টো সরকারকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিলে সরকার যৌথবাহিনীর মাধ্যমে সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। সমাবেশে উপস্থিত হওয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা মতিঝিল এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এরপর হেফাজত ইসলামের সভাপতি আল্লামা শফী সাহেব শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং সরকারের সঙ্গে আপসে চলে যায় হেফাজত ইসলাম। সরোয়াদি উদ্যানে কওমি আলেম সম্মেলনে, শেখ হাসিনাকে কওমি জননী উপাধি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের বাম দলগুলো বহুভাগে বিভক্ত এবং এ কারণে সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে বাম দলগুলোর মতো মানুষ গ্রহণ করেনি। রাশিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টির পতনের পর এ দেশের বাম দলগুলো দুর্বল হয়েছে। অন্যদিকে চিনপন্থি বাম দলগুলো বড় দলের সঙ্গে জোট করে বিভিন্ন সময় ক্ষমতার অংশীদার হলেও জনগণের ম্যান্ডেট পায় নাই।

আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরবে কবে, কিভাবে ফিরবে– এটা এখন মন্তব্য করা দুরূহ। গত চার দশকে দলটির প্রাণভোমরা শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতৃত্বের বেশিরভাগ পলাতক ও কয়েকজন সিনিয়র নেতাসহ নেতাকর্মীদের অনেকেই কারাগারে আটক অবস্থায় এবং মামলায় জর্জরিত তারা।

আওয়ামীলীগ ও দেশ বিরোধীদের কথা হলো, গত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুন-দুর্নীতি-অপশাসনসহ বিধ্বংসী রাজনীতি আওয়ামী লীগকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে।
তবে যে যাই বলুক আওয়ামীলীগের ৩ কোটির উপরে ভোটার রয়েছেন। অন্তত, ২ কোটির মতো একনিষ্ঠ ভোটার আছে আওয়ামীলীগের।

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত রাজনীতিতে জবাবদিহি নিশ্চিত করা। কোন ও দল বড় বা ছোট, নতুন বা পুরাতন, জবাবদিহির ঊর্ধ্বে যেন না থাকে। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত যারা তারা যেন কোনোভাবে সরকারে না থাকে, এটাও স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার জন্য নিশ্চিত করা জরুরি।
সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম পূর্ব শর্ত সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। ছাত্রদের সহযোগীরা সরকারে থেকে গেলে তারা বাড়তি সুযোগ পাবে, অনেক দল ইতোমধ্যে বলেছেন ছাত্রদের দল বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সবার জন্য সমান ব্যবস্থা নিশ্চিত করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া হবে সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

★ রাজনীতি যদি মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক হয়, তবে তা শুধু ঢাকার পিচঢালা রাস্তায় নয়, প্রতিটি শহর, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামের মাটির পথে প্রতিফলিত হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনীতি যেন একটি দূরবর্তী বিষয় বাংলাদেশের রাজনীতি শুধু খবরের কাগজে থাকে, জীবনের ভেতরে তা প্রবেশ করে না।

গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ বোঝেই না রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভাষা। গ্রামের মানুষ তাঁদের দুঃখের কথা সহজ ভাষায় বলেন না কেউ। এই ভাষাগত দূরত্ব শুধু বোঝার সংকট তৈরি করে না, এটি এক ধরনের শ্রেণি বৈষম্যও প্রকট করে তোলে, যেখানে রাজনীতি এলিট শ্রেণির ঘর বন্দী হয়ে পড়ে।

রাজনীতিবীদেরা বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য কাজ করছি।’ কিন্তু কারা সেই জনগণ? চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত? নগরের রাজনৈতিক কর্মী? নাকি সেই কিষানি নারী, যিনি গ্রামের কোনো এক হাটে এক কেজি চাল বিক্রি করে সন্তানের জন্য ওষুধ কিনেছেন? ঢাকা বা শহরে তাঁর গল্প শোনা যায় না, তাঁর চোখের ভাষা রাজনীতির টেবিলে অনুবাদ হয় না।

বাংলাদেশে রাজনীতির একটি শব্দ হলো ‘গণতন্ত্র’
এই শব্দের অপ ব্যবহার। এই শব্দকে যে যার মতো ব্যবহার করে সবাই নিজের বক্তব্য বৈধ করেন। অথচ ‘গণতন্ত্র’ মানে নির্বাচন মানুষের অধিকার প্রতিটি মানুষের মানসিক পরিসরের প্রসার, যেখানে ভিন্নমত থাকলেও নিরাপত্তা থাকবে, দ্বিমত থাকলেও মর্যাদা থাকবে।

আর আমাদের দেশে ভিন্নমত মানে বিরোধীতার জন্য বিরোধী। নিরপেক্ষতা মানে অবুঝ বোকা। কোন প্রশ্ন মানে ষড়যন্ত্র। এমন একটি রাজনীতিতে নাগরিকেরা নিজেদের নিরাপত্তার অনুভব করেন। এক সময় মনে করা হতো, ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাজনীতির পরিবর্তন মানুষের অধিকার আদায়ের পরিবর্তন। বর্তমানে ক্ষমতার পরিবর্তন হলো , মানুষ হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, মানুষের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া লুটপাট, ছিনতাই ও ডাকাতি এবং মানুষের নিরাপত্তা হিনতা । এমনকি মানুষের আচরণ, নৈতিকতা, ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গির কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটে নাই। ক্ষমতায় থাকলে বিরোধীরা বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে ক্ষমতাসীন দলের নিয়ে। নিজেরা যখন ক্ষমতার গন্ধ পায় তখন দেশে যা হয় সব ঠিক। দেশের মানুষ মনে করে, ব্যক্তি বদল, রাজনীতি একই থাকে। আমার প্রশ্ন এখানে—আমরা কি সত্যি পরিবর্তন চাই? নাকি ছাত্র জনতা কে হত্যা করে ক্ষমতার জন্য একটি ‘সহজ পথ’ বের করি?

রাজনীতিতে একমাত্র পথ নৈতিক নেতৃত্বের উত্থান। এমন নেতৃত্ব, যার কাছে জনতার চোখের পানি নয়, যার কাছে জনগণ জীবন নেওয়া নয়। শুধু ভোট ব্যাংকের মাধ্যমে জয় পাওয়া নয়, বরং প্রতিটি মানুষের মন জয় করা। যারা নিজের দলের কাছে সত্য উচ্চারণ করতে ভয় পান না,
যারা নিজের অবস্থান দিয়ে নয়, জনগণের ভালোবাসাদিয়ে সমাজে অবস্থান করা বোঝেন।

আজ বাংলাদেশে সবচেয় বড় রাজনৈতিক অভাব হলো নেতাদের ‘নৈতিক নেতৃত্ব’। নেতাদের চারপাশে গলাবাজি আর উচ্চ কণ্ঠের ছড়াছড়ি, কিন্তু আজ নৈতিক কণ্ঠের বড় অভাব।

বাংলাদেশে নাগরিক সমাজ এক সময় শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিল—আন্দোলনের পেছনে বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি ছিল, জোরালো ছিল তাদের কন্ঠ ও বিবেক ।
কিন্তু কালের পরিবর্তে সময়ের স্রোতে সেই কণ্ঠ আজ যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। এখন আর নাগরিক সমাজের নিরাপক্ষ বুদ্ধিজীবি পলিসি মেকার দেশের মানুষকে সেফ জোনে আশ্রয় দেওয়ার মতো বুদ্ধি জীবি।

তরুণ প্রজন্ম এখন যারা রাজনীতিতে আগ্রহী ছিলেন, আজকের তারাও আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। কারণ দেশের মানুষ প্রথমেই প্রশ্ন করে তুই কোন দলের? এর উত্তর দিয়ে দল করা কঠিন তাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

★★★ তরুণদের একটি বিশাল অংশ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। তারা লিখছে, বলছে কিন্তু তাদের শক্তি সংগঠিত করে রাজনৈতিক বাস্তবতায় রূপান্তর করা হচ্ছে না। একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করতে হলে এই তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক কল্পনা জাগাতে হবে। শুধু ভুলের সমালোচনা নয়, বরং বিকল্প পথ দেখানোর সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

একটা সময় বাংলাদেশের রাজনীতি ছিল, একটি আদর্শবাদী যুদ্ধের অংশ। এখন তা পরিণত হয়েছে ‘ ক্ষমতায় আসা ক্ষমতায় থাকা হল আদর্শবাদী যুদ্ধ। এই বাস্তবতা পাল্টাতে হলে আমাদের রাজনৈতিক কল্পনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। হয়তো দেশের রাজনীতি সুস্থ ধারায় ফিরে আসতে পারে তাহলে।

★★★ অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন ভাবে রাজনৈতিক ভাষা ও সাহস যোগাতে হবে।

★ সব চেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের দরকার এমন নেতৃত্ব, যারা দলে নয়, মূল্যবোধে বিশ্বাস রাখেন দলের কর্মী , সমর্থক ও সাধারণ মানুষের উপর । যারা জনতার পাশে দাঁড়াবেন, ক্যামেরার সামনে নয়, যারা নীতির পক্ষে যাবেন, ব্যক্তির পক্ষে নয়। এমন নেতৃত্ব দরকার দেশের মানুষের জন্য।

আজ বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র সংকটে!
বাংলাদেশে গণতন্ত্র কেবল সংবিধানের পাতায়। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টার যেখানে বলেছেন মব জাসটিজ নির্যাতন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে, সেখানে সাধারণ মানুষ কি ভাবে ভালো থাকবেন। প্রতিটি মানুষের মনের ভেতরে জাগ্রত হওয়া জরুরি। তার জন্য দরকার রাজনীতিকে নতুন করে আবিষ্কার। দল থেকে শুরু করে নাগরিক পর্যন্ত—সর্বস্তরে একটি নৈতিক বিবর্তন। বাঁচতে হলে সকলে হাতে হাত, কাঁদে কাদ রেখে নিজেকে অন্যের উপর বিশ্বাস রেখে চলতে হবে।

Loading


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ