• বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন

শহর থেকে গ্রামে নববর্ষ উদযাপনে ঐতিহ্যের ছোঁয়া

admin
আপডেটঃ : সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এ দেশজুড়ে বর্ণিল আয়োজনে মুখর ছিল শহর থেকে গ্রাম—সবখানে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা, লোকজ মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈচিত্র্যময় রীতিনীতির মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদ, শিবচরের প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে কুষ্টিয়ার রাস্তায় মোটরসাইকেল বহর—সবখানেই বাজিয়েছে বাংলা সংস্কৃতির এক ঐকতান। অসাম্প্রদায়িক চেতনা, দেশীয় ঐতিহ্য ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উদ্ভাসিত হয়েছে এ বছরের বৈশাখী আয়োজন।

বাংলাদেশের খবরের ব্যুরো প্রধান, জেলা প্রতিনিধি, মাল্টিমিডিয়া করেসপন্ডেন্ট, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে বিস্তারিত।

বরিশাল : বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় অংশ নেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। শোভাযাত্রা শেষে উপাচার্য নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলা নববর্ষ আমাদের ঐতিহ্য। বৈচিত্র্য নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই।’

চাঁদপুর : চাঁদপুরে সরকারি দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষ। সকাল ১০টায় চাঁদপুর স্টেডিয়াম থেকে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে এটি শেষ হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজে। পরে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঘুড়ি উৎসব।

লক্ষ্মীপুর : সদর উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। প্রদর্শিত হয় লাঠি খেলা ও পালকি। শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। শোভাযাত্রা শেষে জেলা কার্যালয় প্রাঙ্গণে উদ্বোধন হয় তিন দিনব্যাপী লোকজ মেলা।

গোপালগঞ্জ : পৌর পার্কে আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। এরপর বের হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। এতে অংশ নেয় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষ।

পিরোজপুর : সকালে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে বের হয় শোভাযাত্রা। পরে সেখানে আয়োজিত হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আলম খান। একই মাঠে শুরু হয় সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা।

মুন্সীগঞ্জ : জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকালে কালেক্টরেট মাঠ থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শহরের সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিল্পকলা একাডেমিতে লোকজ মেলার উদ্বোধন করা হয়। মেলায় বসে গ্রামীণ ঐতিহ্যের পসরা।

ফেনী : ‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’—এ প্রতিপাদ্যে আয়োজন করা হয় র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ইউএনও আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা শেষে হয় পুরস্কার বিতরণ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।

বান্দরবান : জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এতে ১১টি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অংশ নেয় নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাকে। শোভাযাত্রা শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

জামালপুর : শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ইউনিভার্সিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণ শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ উৎসবে মুখরিত হয়। আয়োজন করা হয় ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় বাংলা নববর্ষ ও পহেলা বৈশাখ উদযাপন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দু’দিনব্যাপী বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয় একটি আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে। যা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে স্বাধীনতা প্রাঙ্গনে এসে শেষ হয়। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন।

এছাড়া, মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে হস্তশিল্প, কুটির শিল্প ও বাঙালি ঐতিহ্য উপস্থাপন করা হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয় সংগীত ও বাংলা নববর্ষের গান পরিবেশন করে। এছাড়াও, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। জেলা প্রশাসক মেলার ষ্টল পরিদর্শন করে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

দিনাজপুর : হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয় শোভাযাত্রার আয়োজন করে। যা ক্যাম্পাস ও আশপাশের সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) : উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় লোকজ মেলা ও বর্ষবরণ শোভাযাত্রা। আয়োজন করা হয় রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শিবচর (মাদারীপুর) : ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’—এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মাদারীপুরের শিবচরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ উদযাপন করা হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে।

সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে উপজেলা প্রশাসনের সামনে থেকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়ে পৌর এলাকার প্রধান সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে শেষ হয়।

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : কালিয়াকৈর উপজেলার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আয়োজনে জাতীয় নাগরিক পার্টির উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর ১২টায় খাড়াজোড়া এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এ শোভাযাত্রা বের হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির কালিয়াকৈর উপজেলা সংগঠক সুমন বাড়ইয়ের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অতিক্রম করে। এতে স্থানীয় জনগণেরও অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। পরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, দল উন্নয়ন ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জনগণের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট রয়েছে।

কুষ্টিয়া : জাতীয় নাগরিক পার্টির কুষ্টিয়া জেলা শাখার আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ১০টা ৩০ মিনিটে রাজারহাট মোড় থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে এনএস রোড হয়ে বনানী হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মোটরসাইকেল বহর, ব্যানার, ফেস্টুন ও লোকজ সাজসজ্জা ছিল চোখে পড়ার মতো। শেষে সমর্থকরা পান্তা-ইলিশ, দই-চিড়া খেয়ে নববর্ষ উদযাপন করেন।

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) : উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে কটিয়াদীতে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে লোকজ উপকরণে সাজানো বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। সকাল ৯টায় কটিয়াদী সরকারি কলেজ থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এতে উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

আত্রাই (নওগাঁ) : আত্রাই উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করা হয়। শোভাযাত্রার পর পান্তা, আলুভর্তা, গুঁড়-মুরকি উৎসব হয়।পরে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও কাব্যগ্রন্থ ‘স্বাধীনতার রক্ত দুষণ ও স্বাধীনতার স্বপ্ন’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

ধামরাই (ঢাকা) : ধামরাই থানা বিএনপির উদ্যোগে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়েছে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার মাধ্যমে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তমিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি ধামরাই শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা গেট মোড়ে এসে শেষ হয়।

বাকৃবি (ময়মনসিংহ) : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করা হয়। সকালে কে.আর. মার্কেট থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বৈশাখী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার উদ্বোধনী ভাষণ দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিশুদের হাতের লেখা ও বালিশ খেলা প্রতিযোগিতা। দুপুরে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ।

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) : কোটালীপাড়া উপজেলা প্রশাসন বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেছে বর্ণিল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং পরবর্তী সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ইউএনও মো. মাঈনুল হক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।

পূর্বধলা (নেত্রকোনা) : পূর্বধলা উপজেলা প্রশাসন বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেছে বৈশাখী শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার মাধ্যমে। শোভাযাত্রা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেছে শোভাযাত্রা, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। শোভাযাত্রাটি সরকারি মুড়াপাড়া কলেজে গিয়ে শেষ হয়। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়। এতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য প্রদর্শন করা হয় এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও হয়।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই ফুটে উঠেছে বাঙালির সংস্কৃতির বৈচিত্র্য। উৎসবের এই দিনটি দেশজ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বার্তা।

Loading


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ