প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রথম যুগ্ম জেলা ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এবং নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে নির্বাচনী মামলা নং ১৫/২০২০ এর বিগত ২৭/০৩/২০২৫ ইং তারিখে রায় ঘোষণা উক্ত মামলার বাদী ইশরাক হোসেন এবং নির্বাচন কমিশন ও শেখ ফজলে নূর তাপসসহ মোট ৯ জনকে বিবাদী করে অত্র মামলাটি দায়ের করেছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ৫ বছরের আইনি লড়াই শেষে বিজ্ঞ আদালত রায় ঘোষণা করেন। অত্র মামলা নিয়ে এনসিপির উদ্বেগ অপ্রাসঙ্গিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিচার বিভাগের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং অবমাননার শামিল।
উক্ত মামলায় শেখ ফজলে নূর তাপস বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং মামলার জবাব দেন এবং একপর্যায়ে মামলা খারিজ এর জন্য দরখাস্ত করেন। আদালত তৎকালীন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই উভয়পক্ষের শুনানী শেষে শেখ ফজলে নূর তাপসের আবেদন নামঞ্জুর করেন। সেই আদেশে অসন্তুষ্ট হয়ে বিবাদীপক্ষ হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করে দীর্ঘদিন মামলাটি আটকে রাখে, যার ফলে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরও তাপসের সরাসরি হস্তক্ষেপে মামলা হাইকোর্টে শুনানি বার বার পিছিয়ে যায় এবং শুনানী না করে ফেলে রাখে। ফলে বিবাদীপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ও জবাব দাখিল করা সত্ত্বেও মোকদ্দমাটি দীর্ঘদিন অনিস্পন্ন থেকে যায়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামলাটি ৫ আগস্টের পর দেশের বিচার ব্যবস্থা আওয়ামী সরকারের রাহুমুক্ত হওয়ায় হাইকোর্ট রিভিশন খারিজ করে নিম্ন আদালতে দ্রুত নিস্পত্তির জন্য প্রেরণ করলে, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল পুনঃরায় মামলাটির শুনানি শুরু করেন। বাদীপক্ষে দেওয়ানী কার্যবিধির ৬ নং আদেশের ১৭ নং নিয়ম মতে আরজি সংশোধন এর দরখাস্ত দাখিল করে সংশ্লিষ্ট আইনের ধারাটি সংশোধন করে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধি মালা ২০১০ এর বিধি-৫৯ এর (খ) উপবিধি অনুযায়ী প্রার্থিত প্রতিকার চাওয়া হয়, যা আদালত আইন অনুযায়ী মঞ্জুর করেন না। এনসিপি আইনের ব্যাখ্যা এবং আইন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় তারা আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্তি করছে। একই সঙ্গে আদালতের আদেশকে অবমাননা করছে। এছাড়াও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি কারণ নিয়ে এনসিপির বক্তব্য একেবারেই শিশুসুলভ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যে কোন মামলায় দ্রুত নিষ্পত্তি আদালতের একটি সহজাত ক্ষমতা। তাছাড়া ২০২০ সালে দায়েরকৃত মামলাটি ২০২৫ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে যেখানে দীর্ঘ ৫ বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। এটি মোটেও সংক্ষিপ্ত সময় নয় বরং মোকদ্দমাটি আরো পূর্বেই নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন ছিল। একটি নির্বাচনী মামলার নিষ্পত্তি সংক্ষিপ্ত সময়ের হওয়া উচিত। এনসিপির এজাতীয় বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। এছাড়া এ সংক্রান্ত যে বক্তব্য দিয়েছে তা সম্পূর্ণ আইনী অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। মামলার তদবিরকারক বাদীর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কেউ হতে পারে বিধায় আদালত হলফনামা গ্রহণ করেছে যা সম্পূর্ণ আইন মেনেই করা হয়েছে। এছাড়াও, আদালত কোন প্রকার বিচার বিশ্লেষণ করেনি বলে যে বক্তব্য এনসিপি দিয়েছে, তা এক কথায় তাদের জ্ঞানের স্বল্পতারই বহিঃপ্রকাশ এবং আদালত অবমাননার শামিল।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আদালত যেকোন রায় ডিক্রি দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ আইন মেনেই রায় প্রদান করেন। এক্ষেত্রে কেউ যদি ন্যায় বিচার হয়নি বলে মনে করে, তাহলে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে এবং তার বক্তব্য উক্ত উচ্চ আদালতে রাখারও সুযোগ আছে। এভাবে প্রেস নোট দিয়ে বক্তব্য প্রদান দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও আদালতকে অবমাননা ছাড়া কিছুই নয়। যেহেতু উক্ত রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সহিত আইন মন্ত্রণালয়েও প্রেরিত হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে, উক্ত রায়ে কোন অসামঞ্জস্যতা না পাওয়ার পরই, আইন মন্ত্রণালয়ে উক্ত রায়ের আইনী বিষয় যাচাই করে দেখার জন্য পাঠালে আইন মন্ত্রণালয় আইনী দিক দেখার পর উক্ত রায়ে কোন প্রকার আইনী অসঙ্গতি না থাকায় পুনরায় নির্বাচন কমিশনে ফাইল পাঠালে নির্বাচন কমিশন যথাযথ নিয়ম মেনেই ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসাবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ভুলভাল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করা হতে আমাদের বিরত থাকাই শ্রেয়। এ জাতীয় ন্যাক্কারজনক কাজ হতে বিরত থেকে গণতন্ত্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ভোটাধিকার সর্বোপরি জনগণের ভোটের অধিকারসহ আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এনসিপির প্রতি অনুরোধ রইল। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ও সংগ্রামের পর অর্জিত রাহুগ্রাস মুক্ত বিচার ব্যবস্থাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করার সকল ষড়যন্ত্রকে রুখে দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আমাদের আকুল আবেদন রহিল।