• রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

সংখ্যালঘুদের নিয়ে নতুন কৌশল জামায়াতের

admin
আপডেটঃ : শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

  • নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশের রাজনীতির এক সময়কার বিতর্কিত ও নিষিদ্ধ দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবার আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশলগতভাবে বড় রকমের পরিবর্তন এনেছে। দীর্ঘদিন ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কারণে সমালোচনার মুখে থাকা দলটি এবার শুধু মুসলিম ভোটার নয়—সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছে।

জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, জেলা, বিভাগীয় এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় সভা করছে দলটি। উদ্দেশ্য, ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলা। এসব সভায় সংখ্যালঘু নেতাদের সরাসরি আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে এবং তাদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।

দলটির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক ঘোষণায় জানান, জামায়াতের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় এখন থেকে ধর্মীয় পরিচয় নয়, বরং সততা, আদর্শ ও যোগ্যতাই হবে প্রধান বিবেচ্য। এমনকি অমুসলিম নাগরিকদেরও প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি ঢাকার একটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক ‘সম্প্রীতি সম্মেলনে’ জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে হলে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সম্মান ও অধিকার রক্ষা করতে হবে। জামায়াত কারও বিরুদ্ধে নয়, বরং সবার পাশে থাকতে চায়।”

এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু মহাজোট, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ ও খ্রিস্টান ফেডারেশনের একাধিক নেতা। তারা বলেন, রাজনৈতিকভাবে জামায়াত সম্পর্কে দীর্ঘদিন ভুল ধারণা ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে যে আন্তরিকতা দেখানো হচ্ছে, তা অন্য দলগুলোর চেয়ে অনেক বেশি মানবিক ও সহানুভূতিশীল।

এদিকে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের এই কৌশল তাদের দীর্ঘদিনের ‘একঘরে’ অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা। কিছুদিন আগেও দলটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ছিল এবং সংগঠন হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। সেই দল যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্প্রীতি গড়তে সক্ষম হয়, তবে এটি দেশের রাজনীতিতে এক নতুন পালাবদলের ইঙ্গিত হতে পারে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি নিছক রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে—ভোটের মাঠে প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখতে নতুন সমর্থক গোষ্ঠী তৈরির প্রচেষ্টা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশও এখনও সংশয়ে আছে—জামায়াতের অতীত ইতিহাস কতটা বদলেছে, তা সময়ই বলে দেবে।

যদি জামায়াত তাদের নতুন অবস্থান ধরে রাখতে পারে এবং জনগণের আস্থা অর্জনে সফল হয়, তবে এটি অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। একইসঙ্গে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকেও সংখ্যালঘুদের প্রতি তাদের নীতিতে স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতা দেখাতে হতে পারে।

বলা যায়, একসময় যাদের নিয়ে সমাজে ভয় ও বিতর্ক ছিল, সেই জামায়াত এখন ভোটের রাজনীতিতে নিজেকে রূপান্তরিত করতে চাইছে ‘সবার জামায়াতে’। তবে এই রূপান্তর কতটা বাস্তব ও দীর্ঘস্থায়ী, তা নির্ভর করছে তাদের কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা এবং জনগণের বিশ্বাস অর্জনের ওপর।

Loading


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ