• বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ১২:৫৬ অপরাহ্ন

ঋণের বোঝা কমাতে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে সরকার

admin
আপডেটঃ : সোমবার, ২ জুন, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি পূরণে এবার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সোমবার (২ জুন) বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

গত দুই অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে প্রত্যাশিত ঋণ নিতে পারেনি সরকার। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। এদিকে, ২১ মে পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে সরকার।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ব্যাংক ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তবে বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের কাছে আপাতত বিকল্প কোনো পথও নেই।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা বা জিডিপির ৯ শতাংশ রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সরকারের ব্যয়ের খাতের মধ্যে এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সুদ ব্যয় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদ্যুৎ ও সার বাবদ ভর্তুকি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের উপর ভরসা করছে সরকার। এছাড়া বিশাল এ ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করেছে।

ছক অনুযায়ী, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেবে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ হিসাবে নেবে ৯৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা আছে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

আসন্ন বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সরকার সবচেয়ে বেশি ধার নিতে চায় ব্যাংক খাত থেকে। যার পরিমাণ ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এরপর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সুদ পরিশোধেও ব্যয় বাড়ছে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ উৎস—সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বেশি থাকায় সুদের বোঝাও ভারী হচ্ছে। আগামীতে রাজস্ব আদায়ের হার না বাড়লে ভবিষ্যতে সরকারের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় পর্যন্ত ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। এ ঋণ পরিশোধে এখন ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। ফলে আসন্ন বাজেটের ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ অর্থ সুদ পরিশোধে ব্যয় করবে বলে লক্ষ্য ঠিক করেছে।

সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা।

এবারের বাজেট উপস্থাপনে সংসদ না থাকায় কোনো সংসদীয় আলোচনা বা বিতর্ক হবে না। তবে ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জনমত নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে, আর সেই মতামতের ভিত্তিতে বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। চূড়ান্তকরণের পর যেকোনো একদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেট কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

Loading


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ